সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন
এসময় সুজন বলেন চট্টগ্রামের আজকের যে বিশাল উন্নয়ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই সাধিত হয়েছে এবং এর সকল কৃতিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। না চাইতেই চট্টগ্রামবাসীকে অনেক কিছু দিয়েছেন তিনি। বিশাল অংকের প্রকল্পের পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে তিনি চট্টগ্রামবাসীর প্রতি ভালবাসার উদার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মূলত চট্টগ্রামের আগামী দিনের গুরুত্বকে মাথায় রেখে চট্টগ্রামকে সেভাবে তৈরী করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তবে চট্টগ্রামের এতো ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাঝেও কিছু অপূর্ণতাও রয়েছে যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য তুলে ধরেন খোরশেদ আলম সুজন। বিশেষ করে চট্টগ্রামের অতি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর পতেঙ্গা এলাকায় একটি মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করা একান্ত জরুরি। ইপিজেড অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানে বছরে অনেক মায়েরা সন্তান সম্ভবা হন কিন্তু পতেঙ্গা থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত নেই কোন মাতৃসদন কিংবা হাসপাতাল। ফলত বিশাল এলাকা পাড়ি দিয়ে তাদেরকে মূল শহরে আসতে হয়। এতে করে নিশ্চিতভাবে বিপদের কবলে পড়েন একজন সন্তান সম্ভবা মা কিংবা একজন সাধারণ রোগী।
পাশাপাশি উত্তর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য দুইটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ করাও প্রয়োজন। কেননা জেলার একটি গ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসতে একজন রোগীকে প্রচুর কষ্ট পোহাতে হয়। এছাড়াও চট্টগ্রামের সন্তানদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি স্কুল ও কলেজের অভাবে রয়েছে। চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সে হারে সরকারি স্কুল ও কলেজ নির্মাণ হয়নাই। তাই বিষয়টা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। একটি শহরের সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ অত্যন্ত জরুরি। অথচ চট্টগ্রামে খেলার মাঠের অভাব রয়েছে। যাও কয়েকটা মাঠ ছিল চট্টগ্রামে সেগুলো বাণিজ্যিকরণের থাবায় ক্ষত বিক্ষত। ফলত সন্তানদের মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সন্তানরা নানারকম অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তাই একটি সুস্থ, শিক্ষিত ও মানবিক আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলতে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ নির্মাণ করারও প্রয়োজন রয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরটি পাহাড়, টিলা, নদ-নদী ও গাছ-গাছালির সমন্বয়ে সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি। অথচ এখানে বিনোদনের জন্য নেই কোন মানসম্মত পার্ক। এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক নির্মাণ করলে তা নগরবাসীর পাশাপাশি দেশী বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে অভিমত সুজনের। এছাড়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুটির দুরবস্থা ফলে ঐ এলাকার মানুষরা মূল নগরী থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। সেতুটির জন্য ঐ এলাকার মানুষরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। তাই কালুরঘাট সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করাও জরুরি। এ সেতুটি নির্মিত হলে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন চট্টগ্রাম হচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার। ছয় দফা থেকে শুরু করে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে চট্টগ্রাম সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এখানে নেই কোন মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণীয় রাখতে চট্টগ্রামে একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ সর্বস্তরের জনগনের প্রাণের দাবী। সুজন আরো বলেন পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা এবং পাহাড়তলী ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা দুটি আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবী।
এ দুটি কারখানাকে আধুনিকায়ন করা গেলে তা রেলের যাত্রীসেবা ও পণ্য পরিবহনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া দোহাজারী রেললাইটি সংস্কার করে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু করলে ঐ এলাকার উৎপাদিত দেশী শাকসবজি, মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য সহজেই মূল নগরীতে নিয়ে আসা যাবে। এতে করে একদিকে যেমন প্রান্তিক কৃষকগণ উপকৃত হবেন অন্যদিকে নগরবাসী দেশী খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। চট্টগ্রামে তিনটি বড়ো ইপিজেড দেশের রপ্তানী বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু সেখানকার শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ কিংবা সে বিষয়ে পড়ালেখার কোন সুযোগ নেই। প্রশিক্ষণ কিংবা কারিগরি জ্ঞাণ না থাকার কারণে শ্রমিকরা সুযোগ সুবিধা এবং ভালো বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই চট্টগ্রামে একটি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস টেকনোলজি স্থাপন করলে তা রপ্তানীতে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত সাবেক চসিক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের।